বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ১৭ জুন ২০২৫ ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন রিকভারি এন্ড এডভান্সমন্টে অব ইনফরমাল সেক্টর ইমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দল প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থাসমূহ কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের সাথে মতবিনিময় করেন।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ফাইন্যান্স অফিসার তিপাওয়ান ভুটাপ্রতীপ বলেন যে, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষানবিশির মতো উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে এবং সহনশীলতা ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্প মানুষকে তাদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ ও গর্ব প্রত্যক্ষ করা তার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক ও প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ভুটাপ্রতীপ বলেন যে, প্রকল্পভুক্ত তরুণ ও উদ্যোক্তারা কমিউনিটিতে যে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছেন তা অসাধারণ, এবং এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে একজনকে এগিয়ে নেওয়া মানে অনেককেই একসাথে এগিয়ে নেওয়া।

পরিদর্শনের শুরুতে প্রতিনিধি দল পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থা সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভস (এসডিআই)-এর অধীনে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের সাথে এক প্রাণবন্ত আলোচনা সভায় অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা তাদের উদ্যোগ শুরু করার পেছনের গল্প, প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত দক্ষতা এবং প্রকল্পের সহায়তায় তাদের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।

এরপর প্রতিনিধি দল পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থা সোস্যাল আপলিফ্টমেন্ট সোসাইটি (সাস) ও ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)-এর শিক্ষানবিশি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে তরুণরা কীভাবে বাস্তব কর্মপরিবেশে হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জন করছেন, সেটি প্রত্যক্ষ করেন প্রতিনিধিরা। তারা শিক্ষানবিশি সম্পন্নকারীদের কর্মস্থল ও উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপ উদ্যোগও সরেজমিনে ঘুরে দেখেন এবং প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সোশ্যাল প্রোটেকশন ইকোনমিস্ট ও রেইজ প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, “রেইজ প্রকল্প অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির বহুমাত্রিক দিক তুলে ধরছে। এখানে প্রান্তিক তরুণরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে সম্মানজনক ও উপযুক্ত মজুরির কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পাচ্ছে।”

প্রতিনিধি দল সহযোগী সংস্থা সাস কর্তৃক আয়োজিত ‘ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগ উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ সেশনও পর্যবেক্ষণ করেন, যেখানে প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে তাদের উদ্যোগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে মতবিনিময় হয়। এছাড়া, ভার্ক কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা শিক্ষানবিশি কার্যক্রমে যুক্ত মাস্টার ক্র্যাফটসপার্সন (ওস্তাদ)-দের সাথে আলোচনা করেন, যেখানে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ওস্তাদদের ভূমিকা এবং তাদের কর্মসংস্থানে এ কার্যক্রমের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়।

এই প্রসঙ্গে আনিকা রহমান বলেন, “মাস্টার ক্র্যাফটসপার্সনগণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার গৌরব অনুভব করছেন।” তিনি আরো বলেন, “সামগ্রিকভাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকায়ন উন্নত হচ্ছে এবং তাদের অর্থনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

পরিদর্শনকালে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনিয়র ফাইন্যান্স অফিসার তিপাওয়ান ভুটাপ্রতীপ, সিনিয়র সোশ্যাল প্রোটেকশন ইকোনমিস্ট ও রেইজ টাস্ক টিম লিডার আনিকা রহমান, এবং বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। পিকেএসএফ-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ও প্রকল্পের সমন্বয়কারী, রেইজ প্রকল্প এবং গোলাম জিলানী, ব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ও উপ-প্রকল্প সমন্বয়কারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ও পিকেএসএফ-এর যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাঁচ বছর মেয়াদি রিকভারি এন্ড এডভান্সমন্টে অব ইনফরমাল সেক্টর ইমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের ১,৮৩,০০০ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প অনানুষ্ঠানিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে এ খাত সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন।