আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের স্বরূপ
১৯ জুন ২০২৫, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:০৭ এএম

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন ও তা অব্যাহত রাখার জন্য একাধিক রাজনৈতিক দল থাকা একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। রাজনৈতিক দলের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সমমনা নাগরিকগণ ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। একটি স্বতন্ত্র মঞ্চে সমবেত হতে পারেন। কোনো একটি মতাদর্শ বা মূলনীতিকে পুরোভাগে আনা রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনার কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা ও ভবিষ্যতের সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল থাকা জরুরি। দল না থাকলে গণতন্ত্রের সূচনা কিংবা বিকাশ কোনটাই সম্ভব নয়, বরং ফ্যাসিবাদ একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। বলা যায়, দলব্যবস্থা ও গণতন্ত্র পরস্পরের সহগামী। বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র চর্চার চেষ্টা চলছে। কিন্তু গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খাচ্ছে। বিশ শতকের প্রথম ভাগের দিকে এ অঞ্চলে দলব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। এ থেকে বোঝা যায়, জনগণের গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ আগ্রহ ও ব্যাকুলতা রয়েছে। সেই মোতাবেক একটি বহুমাত্রিক সমাজমানস ইতোমধ্যে গড়ে উঠলেও প্রায়শই জাতীয় নেতৃত্বে তার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় না। সেজন্যই গণতন্ত্র মসৃণ পথ ধরে সামনে অগ্রসর হতে পারেনি। গণতন্ত্র বিঘিœত ও ধাক্কা খেয়েছে বারবার। এর নিকৃষ্টতম উদাহরণ হচ্ছে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তীকালে বাকশাল গঠন ও বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার উচ্ছেদের ঘটনা। তারপর পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, গোমতি দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের কতটুকু উন্নতি হয়েছে, তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের শাসনামলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে একদলীয় বাকশালের সূত্রপাত ঘটে। তারপর রাজনৈতিক ভূমিকম্পে বাকশালের ধ্বংসস্তূপের ওপর জাতি নতুন উদ্যমে গণতন্ত্র চর্চার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ায়। অতঃপর বহুদলীয় ব্যবস্থার বিকাশ হলেও কার্যত দেশে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা জনগণের সামনে দৃশ্যমান হয়েছে। বিগত সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরে-ফিরে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক ও স্যাকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রবক্তা হিসেবে দাবি করে। এদিকে বিএনপি নিজেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসেবে উপস্থাপন করে। বাংলাদেশের জনগণের দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ ভারতের মদদপুষ্ট একটি স্যাকুলার দল। বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে পতিত শেখ হাসিনা ভারতপ্রীতি ছাড়া কিছুই বোঝেননি, যার পুরস্কার হিসেবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জনগণের আন্দোলনের ফলে দেশে টিকতে না পেরে ভারত সরকারের আশ্রয়ে অবস্থান নিতে হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি মধ্যমপন্থি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে জনগণের নিকট নিজেকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন। সততার মানদ-ে জিয়াকে অধিকাংশ জনগণ পছন্দ করে। তার প্রমাণ জিয়া হত্যাকা-ের পর তার সুটকেসে ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। অপরপক্ষে শেখ হাসিনা পলায়নের সময় টাকা ভর্তি ১৪টি সুটকেসসহ অনেক কিছুই আত্মসাৎ করেছে। বিএনপি ভারতবিমুখ দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দল দু’টিকে কেন্দ্র করে জাতি দু’টি আলাদা আলাদা শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশকে গভীরভাবে লক্ষ করা গেছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু’টি দল দেশের দু’টি প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে। দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্য অনেক দেশেই রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো অবস্থা বিশ্বের কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় দুই শতাব্দী ধরে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু ওই দেশের উভয় দলের নেতাদের মধ্যে এমন কোনো প্রতিহিংসা বা পরস্পরকে দুশমন ভাবার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ক্ষমতায় যে দলই যাক না কেন, দেশ গড়ার কাজে তারা সবাই একসাথে হয়ে কাজ করে অব্যাহতভাবে।
২০১৩ সালে বিএনপি তার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ কর্মীসমাবেশ আয়োজন করে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ নানা স্তরের নেতাকর্মী সমর্থক বহু নারী-পুরুষ সেখানে সমবেত হয়। দেখা গেল, সভাটি যখন শেষ পর্যায়ে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সমাপনী ভাষণদান করছেন, ঠিক তখন সভাস্থলের বিপরীত দিক থেকে আকস্মিকভাবে নিক্ষিপ্ত কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে চতুর্দিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় হুড়োহুড়ি, ছুটোছুটি। সভাটি তখন প- হয়ে যায়। এর পরের ঘটনাবলী প্রায় সকলেরই জানা। অনতিদূরে অবস্থানরত পুলিশ বাহিনী পলায়নপর লোকদের ওপর হামলে পড়ে, আবার জলকামান দিয়েও চালানো হয় আক্রমণের অস্ত্র। একই সাথে চলে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ। তাতে আহত হন কয়েকজন সামনের সারির নেতা। ভীত সন্ত্রস্ত নেতৃবৃন্দ সভামঞ্চ ত্যাগ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এখানেই পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি। অবিলম্বে পুলিশ সদর্পে প্রবেশ করে বিএনপি কার্যালয়ের অভ্যন্তরে। তল্লাশির নামে অফিসে ব্যাপক ভাংচুর করে। তছনছ করে অফিসের নানা মূল্যবান ফার্নিচারসহ জিনিসপত্র। এক পর্যায়ে পুলিশ প্রবল আক্রোশে মহাসচিবের কক্ষের দরজা হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলে। দলীয় চেয়ারপার্সনের কক্ষটিও তছনছ করা হয়, যদিও তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এসব কক্ষে অবস্থানকারী বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশ বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং অশোভন আচরণ করে। তাদেরকে জোরপূর্বক অফিসের বাইরে বের করে দেয়া হয়। তারপর বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে পূর্ব থেকে এনে রাখা ৬টি প্রিজনভ্যানে তুলে নেয়া হয়। কোনো প্রতিবাদ, আপত্তি কিংবা কোনো প্রশ্নের উত্তর উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা না দিয়ে কিংবা কোনো গ্রেফতারি পরওয়ানা না দেখিয়েই সবাইকে আটক করে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, পুলিশ শুধু অফিসটি ল--ভ-ই করেনি, মূল্যবান কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সুটকেস ভর্তি লক্ষ লক্ষ চাঁদার টাকা, বছরের পর বছর ধরে রক্ষিত পার্টির নানান রেকর্ডপত্র, অন্যান্য দরকারি কাগজপত্রও নিয়ে যায়। এক কথায় অফিসটিতে এলাহী কান্ড ঘটায় পুলিশ। পুলিশের এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকা-, লুটপাট, ভাংচুর এবং নেতাদের গণগ্রেফতার অসম্মান, অপমানজনক আচরণ কোনো সভ্যসমাজে কল্পনা করা যায় না। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটা অবিশ্বাস্য। কেবল দুর্দান্ত স্বৈরতান্ত্রিক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শাসনেই এমনটা সম্ভব হতে পারে। গণতন্ত্রের প্রতি সামান্য পরিমাণ শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এহেন অগণতান্ত্রিক আচরণ করা কোনো দায়িত্বশীল সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার পুলিশের এমন তা-বকে প্রকাশ্যে অনুমোদন করেছে আর অট্টো হাসিতে ফেটে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নগ্ন হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে তার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে তার অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকার এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার বাসনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় দেশের জনগণের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হাসিনার পুলিশ বাহিনী হেফাজতের সমাবেশে যে নারকীয় তান্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে। রক্তাক্ত শাপলা চত্বর এখনো লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের কথা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশের জনগণ জানে যে, শেখ হাসিনা সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ ছিল না, ছিল না বিরোধী দলগুলোর প্রতি মিনিমাম সম্মানবোধ। আলেমদের প্রতিও অসম্মানের ঝুঁড়ি নিক্ষেপ করা হয়েছে বারবার। সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ ও হত্যাকন্ডের মতো ঘটনা কম ঘটেনি। শিক্ষকদের অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মানবাধিকারের প্রতি তাদের উদাসীনতার কোনো ঘাটতি ছিল না। তৎকালীন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, তারা শুধু বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নই করতে চায়নি, উপরন্তু দেশে ব্যাপক নৈরাজ্য, হানাহানি, রাহাজানি, সৃষ্টি হোক তা চেয়েছিল। সমাজের সকল স্তরে একটা রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ুক সেটাই চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল এর মধ্য দিয়ে দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তারই ফাঁক-ফোকর বেয়ে দেশে কোনো তৃতীয় শক্তির উত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে। সেই ফাঁকে কুশাসনের বোঝা ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজের গা বাঁচিয়ে ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে পালিয়ে গেলেও তার যেন কোনো সমস্যা না হয়। তারা মনে করেছিল এতে তাদের সমস্ত অপকর্ম আড়াল হয়ে যাবে। তাদের পালিয়ে যাওয়াটা সত্যে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা জনগণের চাপের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ক্ষমতা ছেড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অন্ধকারে রেখে ভারতে পালিয়ে গেছে। সেখান থেকে দেশের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট নামের আপদ সরকারের লুটপাট, চাঁদাবাজি, দলবাজি দুর্নীতি ও দখলদারি চালিয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, মিডিয়ার ওপর দলন-পীড়ন চালিয়েছে, দেশজুড়ে ত্রাস, খুন, গুম ও আয়নাঘরের রাজত্ব কায়েম করেছে। জাতিকে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি বিশেষ দেশ ও সম্প্রদায়ের পদতলে নিবেদন করেছে। সর্বোপরি অন্তহীন দুর্নীতির নয়া মহাভারত রচনা করেছে। তাতে তারা বুঝে গেছে যে, তাদের জন্য নতুনভাবে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন তো দূরের কথা রাজনৈতিক মাঠে ফিরে আসাটাও অসম্ভব। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই চায় না আওয়ামী লীগ আবার নতুনভাবে রাজনীতির মাঠে নেমে আসুক। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে মানুষ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার অনিবার্য এবং ইতোমধ্যে তা শুরু হয়েছে। জনগণ চায় গণহত্যার বিচার, শেখ হাসিনার পুনর্বাসন নয়। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল জেল-জুলুম, হত্যা, গুম, খুন, গ্রেফতার, ফাঁসি প্রভৃতি দ্বারা রাজনীতির ময়দান শূন্য করে, বিরোধী দলহীন ফাঁকা মাঠে একটি সাজানো নির্বাচন করে ক্ষমতা পুনর্দখল করতে। এছাড়া পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, দলীয় কর্মী-ক্যাডার দিয়ে দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতা প্রলম্বিত করা। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে, সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিকে বিকশিত করা। সংঘাত, প্রতিহিংসা কিংবা উৎখাতের সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক ধারণার বিপরীত। আওয়ামী লীগের গোটা শাসনকাল সচেতনভাবেই সংঘাতের পথ ধরে অগ্রসর হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হচ্ছে প্রতিপক্ষকে বরদাশত করা, তাদের কথা শোনা, তাদের বিরোধিতা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া, প্রতিহত করা নয়। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে বিরোধী দলকে প্রতিহত করা, প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নির্মূল করার সমস্ত অপকৌশল চর্চা করা হয়েছে। সেই অপচেষ্টা রক্তাক্ত রূপধারণ করেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। জাতিকে গণতন্ত্রের উন্মুক্ত ময়দান থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল নিরন্তরভাবে। সমাজে ক্রমশ আতঙ্ক-উদ্বেগের কোনো সীমা ছিল না। জাতি হয়ে পড়ছিল বিভাজিত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সশস্ত্রভাবে প্রতিহত করেছে শাসক মহল। দিনের পর দিন ঘটেছে রাজনৈতিক প্রাণহানির ঘটনা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, গণতন্ত্রে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিহিংসা ও শত্রুতা নয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সমাজের নানান গোষ্ঠী আলেম-ওলামা, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী প্রভৃতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে বারবার। সংঘাত-শত্রুতা উসকে দিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরিতে আনুকূল্য প্রদর্শন করেছে সবসময়। এতে করে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটিয়ে চুপিসারে পালিয়েছে দলবল নিয়ে। রাজনৈতিক পালাবদলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হতে হবে জনগণের প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজ রাজনৈতিক দলের প্রধানমন্ত্রী হবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানমন্ত্রী। নিজ দলের বাইরের জনগণ ছিল তার নিকট তুচ্ছ। দেশের সাধারণ জনগণকে তিনি সবসময় মূল্যহীন মনে করতেন। তাই তিনি একাধিকবার গ্রাম পাড়া মহল্লায় ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে জাতিকে চূড়ান্তভাবে বিভাজিত করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতসহ সকল প্রতিপক্ষের নামের তালিকা তৈরি করতে বলে তিনি জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনার মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে গৃহযুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
মুসোলিনি যেমন একচ্ছত্র নেতৃত্বের অভিলাষে ভ্রান্ত আবেগ উসকে দিয়ে গোটা জাতি এবং তার দলকে সহিংস ও ভয়ানক মবোক্রেসিতে পরিণত করে তুলেছিলেন, তেমনি করে শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে তারুণ্যের নামে গণজাগরণ মঞ্চ সাজিয়ে ‘ফাঁসি চাই’, ‘জবাই কর’ ইত্যাদি ভয়ংকর শ্লোগান তুলে জাতিকে বিশেষভাবে নবীন প্রজন্মকে অসংযত আবেগে উদ্বেলিত করে তোলা হয়েছিল। হাস্যকরভাবে কোমলমতি স্কুলের বাচ্চাদের টেনে আনা হয়েছিল বড়দের সহিংস তামাশায়। কচি-কাঁচাদের মনকে জিঘাংসায় উত্তপ্ত করে তোলা হয়েছিল। এরা অসুস্থ ও মনোবিকারগ্রস্ত একটি প্রজন্ম হিসেবে বেড়ে উঠবে, যার পরিণাম হবে ভয়ংকর। এ তরুণ প্রজন্মকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার কুৎসিত খেলায় মেতে উঠেছিল। ক্ষমতার জন্য জাতি ধ্বংস ও ভারতের কাছে দেশ বিক্রীতেও আওয়ামী লীগের এতটুকু কার্পণ্য ছিল না। তার গোটা সময়কাল এ সত্যেরই প্রমাণ বহন করে।
লেখক: শিক্ষাবিদ গবেষক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ওয়াশিংটনে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
ইসরায়েলকে সহায়তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা

পুরো বাঙালি জাতিকে অপমান করেছে অক্ষয়ের ‘কেশরী চ্যাপ্টার টু’

কক্সবাজারজুড়ে জোরদার হয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান, গ্রেপ্তার ২৫

ইসরায়েলের আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঝড়

ইরানের দিকে যাচ্ছে পারমাণবিক শক্তিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রণতরী
৯৬টি চামচ শরীরে আটকে গিনেস রেকর্ডে ইরানি যুবক

আচরণবিধি ও আসনসীমা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সভা আজ

উখিয়ায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৪ নেতা গ্রেফতার

ছাগলনাইয়ায় ঐতিহ্যের নিদর্শন শমসের গাজীর রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ত্রিপুরা শাসন ও সংগ্রামের ইতিহাস

ভিক্টোরিয়ার ছায়ায় সিয়ামের স্বপ্ন: এক গ্লাস লেবুর শরবতে জীবনের গল্প
ঢাকায় মাদক কারবারিদের গুলিতে ডিবির ২ সদস্য আহত

দাউদকান্দিতে ডেঙ্গু সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ

নাটকের শিল্পীদের বেডরুমে পছন্দ করি; সিনেমা হলে প্রশ্নই আসে না—ইকবাল

ভাঙ্গুড়ায় ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা আটক
যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে কানাডামুখী অভিবাসীদের ঢল

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত বেড়ে ৬৩৯
ইরান হামলার সম্ভাবনায় ট্রাম্পের 'মাগা' ঘাঁটিতে উত্তেজনা

জয় দিয়ে বিশ্বকাপ ধরে রাখার অভিযান শুরু সিটির

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া